বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

থেমে গেল জীবন যুদ্ধ

পলাশ মাহবুব, মীরসরাই ॥ জীবন যুদ্ধে হার না মানা খেটে খাওয়া কর্মবীর ওরা। স্ত্রী সন্তানদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে ওদের সংগ্রাম নিরন্তর। ঈদের আনন্দ শেষে সেই জীবন যুদ্ধের কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে আবার পরিবারের কাছে ফিরতে হলো লাশ হয়ে। নওগাঁ থেকে চট্টগ্রামের ১১জন খেটে খাওয়া শ্রমিক অল্প ভাড়ায় পৌঁছার জন্য চালের ট্রাকের উপর উঠে হারালো প্রাণ ৭ জন। প্রাণপণ যুদ্ধ করে প্রাণে রক্ষা পেল আরো ৪ জন। সেই চালের ট্রাকের নিচেই চাপা পড়ে থেমে গেল জীবন যুদ্ধ। নিহত একজন ছাড়া সকলেই একই গ্রামের আত্মীয়-স্বজন।
অশ্রুসজল নয়নে দুর্ঘটনায় আহত ইয়াছিন আলী (৩২) বলেন, আমরা সবাই একই গ্রামের। নিহতদের মধ্যে আলম আমার দুলাভাই। বাকিরা কেউ গ্রামের চাচাতো বা জেঠাতো ভাই। ঈদে পয়সা খরচ হয়ে যাওয়ায় অল্প টাকায় কাজে যাবার জন্য এই ট্রাকে ২০০ টাকা করে উঠেছিলাম। বাসে যেতে প্রায় হাজার টাকা নেয়, তাই আমরা এই ট্রাকে উঠি। বেঁচে যাওয়া আহত যাত্রী ইয়াছিন আরো জানান, ফেনী পার হবার পর ট্রাক চালক মোস্তাকিম ঘুমাতে গেলে চালকের আসনে বসে হেলপার। হেলপারও চোখে ঘুম নিয়ে ড্রাইভিং করছিল। হেলপার চলন্ত অবস্থায় যখন হঠাৎ ঘুমিয়ে যায় তখন ট্রাক উল্টে রাস্তার বাইরে চলে যায়। এরপর আমরা দূরে পড়ায় টেনে টুনে একজনকে বের করতে পেরেছি। বাকিরা নিচে থাকায় আর দেখতেও পাইনি। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে বস্তা তুলে তাদের মৃত দেহ বের করে। আহত আরেক যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, চালক ঘুমাতে গেলে সহকারীকে ট্রাকটি চালানোর জন্য দেয়। এসময় বেশ কয়েকবার সহকারী চোখে ঘুম নিয়ে এলোমেলো গতিতে গাড়ি চালিয়ে ব্রেকও কষেছিল। আমরা কয়েকবার উপর থেকে চিৎকারও করেছি। তখন আমাদের কথা শুনেনি। পরবর্তীতে মীরসরাইয়ের এই সোনাপাহাড় এলাকায় এলে কোনকিছু বুঝে উঠার পূর্বেই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়।
নিহত টিপুর ভাতিজা সেন্টু জানান, ১১ জন শ্রমিক রবিবার দুপুরে নওগা থেকে চাউল বোঝাই ট্রাকে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তারা সবাই চট্টগ্রাম শহরের রাহাত্তারপুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। কোরবানের ঈদে তারা সবাই বাড়ি যায়। এবার আমি বাড়ি যাইনি। চট্টগ্রামেই ছিলাম। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি।