শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ছেলের সামনে মাকে গলাটিপে হত্যা

ctg

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চ ট্টগ্রামে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিশু সন্তানের সামনেই তার মাকে হাত-পা বেঁধে গলাটিপে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মাকে বাঁচানোর আকুতি জানানোর কারণে সাঈদ নামে এই শিশুকেও গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
শনিবার (৫ মার্চ) মধ্যরাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটিতে প্রবাসী নুুরুল আলমের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত পারভীন আক্তার প্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রী। তার সন্তান নূর মোহাম্মদ সাঈদ আহত হন। দুর্বৃত্তরা ওই বাসা থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা-পয়সা ও মোবাইল সেট নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় পারভীন আক্তারের ভাসুরের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে এটি স্রেফ ডাকাতির ঘটনা নয় বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। জায়গা-সম্পত্তির বিরোধেই ডাকাতির আড়ালে প্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে তারা।
তবে পুরো বিষয়টি তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘বাহ্যিকভাবে এটিকে ডাকাতির ঘটনা মনে হলেও আমরা নানা ধরনের ক্লু পেয়েছি। এর ওপর ভিত্তি করে ভবনের মালিকের ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাসার স্টিলের আলমারি থেকে এক জোড়া কানের দুল, একটি সোনার চেইন, একটি গলার হার, একটি ঘড়ি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব এবং নগদ ছয় হাজার টাকা খোয়া গেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।’ পরিতোষ আরও বলেন, ভবনের মালিকানা নিয়ে নূরুল আলমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল শুক্কুরের বিরোধ ছিল। এ নিয়েও দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলে আসছিল। এই বিরোধের বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখছেন।’
পুলিশ জানায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানার কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ১৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর প্লটে খাতুন ভিলার তিনতলায় থাকতেন প্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রী। ছয়তলা এ ভবনটির মালিক হিসেবে ফটিকছড়ি উপজেলার ছাদেক নগর গ্রামের প্রবাসী আবদুস শুক্কুরের নামে সাইনবোর্ড থাকলেও তার ছোটভাই নূরুল আলমও এর অংশীদার বলে দাবি করতেন। ভবনের মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।

পারভীন হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী তার ছেলে নূর মোহাম্মদ সাঈদ। ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় হলিচাইল্ড স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাঈদ বলেন, ‘শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনজন যুবক বাসার ভেতর ঢোকে। ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। একজন আমার আম্মুকে বলে, ‘আপনি আমাকে চিনেন? আম্মু চিৎকার করে উঠলে তিনজন বেডরুমে গিয়ে তাকে চেপে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়। একজন দুই পা, একজন দুই হাত এবং একজন মুখ চেপে ধরে। আমি আম্মুকে না মারার জন্য আকুতি ও চিৎকার করতে থাকলে একজন উঠে আমাকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যায়। আমার গলা টিপে ধরে সে বলে, ‘তোমাদের যত স্বর্ণ আছে সব দিয়ে দাও।’ সাঈদ বলে, গলাটিপে ধরায় আমিও আর কথা বলতে পারছিলাম না। দুর্বৃত্তরা স্টিলের আলমারি ভেঙে জিনিসপত্র নিয়ে নেয়।’

সাঈদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলে, ‘ডাকাতরা চলে যাওয়ার সময় বলে, ‘তোর মা অজ্ঞান হয়ে আছে। নাকে মুখে পানি দিলে জ্ঞান ফিরে আসবে।’ তিন দুর্বৃত্ত চলে যাওয়ার সময় দরজার বাইরে থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দেয়। এ সময় সাঈদ পানি নিয়ে তার মায়ের মুখে ঝাপটা দিতে থাকে। আম্মু, আম্মু বলে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু তার আম্মু তার ডাকে আর সাড়া দেয়নি। সে জোরে জোরে চিৎকার করে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে।

পরে চাচাতো ভাই আবদুর রহমান মাসুদ গিয়ে দরজা খুলে দেয়।’ এরপর রাত বারটার দিকে পারভীন আক্তারকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আটককৃত আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই আবদুর রহমান মাসুদ ঘটনা নিয়ে তার আচরণ ছিল রহস্যজনক। তিনি সাংবাদিকদের একেক সময় একেক ধরনের কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে মাসুদ রেগে যান।

তিনি বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে তো কোন বিরোধ ছিল না। এটা ডাকাতির ঘটনা। এর বেশি কিছু নয়। মাসুদ শুরুতে সাংবাদিকদের বলে, মাসুদই ঘটনার পর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে এবং তার চাচি পারভিনের মুখ সাদা দেখতে পায়। মাসুদই দ্রুত তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে মাসুদ নয়, মামুনই পারভিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মামুনের বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা ছিল মাসুদের কথায়। আর মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।

এছাড়া বাড়িটিতে বাইরে রাস্তায় একটি, পার্কিংয়ে একটি ও সিঁড়িতে একটিসহ মোট তিনটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব সিসি ক্যামেরায় দুর্বৃত্তদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ভিডিও ফুটেজেই পারভীন হত্যা রহস্য উন্মোচন করা যাবে বলে আশা করছে পুলিশ।