বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

গ্রামীণ জনপদে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

deki
ইমাম হোসেন; ঢেঁকি নিয়ে জনপ্রিয় অনেক ভাওয়াইয়া গান আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এগুলো গাইতেও শোনা যায়। শুধু শোনা যায় না ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ।

যান্ত্রিক সভ্যতা ও কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি ঢেঁকি। ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান আর সেই সাথে গড়ে উঠেছে শিল্প কলকারখানা,পরিবর্তন হচ্ছে রুচির।

যান্ত্রিক সভ্যতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে বাঙালি পাড়াগাঁর এ শিল্পটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পল্লীর ঘরে ঘরে আর ঢেঁকি চোখে পড়ে না। শোনা যায় না ধপাস-ধপ্‌ ছন্দময় শব্দ।

ছোটকালে দেখতাম কোন উৎসব শুরু হলেই পিঠা, পায়েস, ক্ষীর তৈরির জন্য মা মাসিরা ঢেঁকিতে ধান ভানতেন, চাল গুঁড়া করতেন।

কিন্তু এখন বিয়ে শাদী, আনন্দ উৎসব ও পৌষ পার্বণ কোন উৎসবেই আর ঢেঁকি ঘরে সাড়া পড়ে না।

এক সময় ধান ভানা, চাল গুঁড়া করা ছাড়াও হলুদ, মরিচ গুঁড়া করার জন্যও ঢেঁকির ওপরই নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন কল চালু হওয়ার পর কমে গেছে ঢেঁকির কদর।

আজকাল এসব কাজ করা হচ্ছে ডিজেল অথবা বিদ্যুৎ চালিত মেশিনে।

মীরসরাই কম বেশি প্রায় সব গ্রামে দেখা যেতো ঢেঁকির ব্যবহার। এখন আর দেখা যায় না।

মীরসরাই পশ্চিম মায়ানী এলাকার একটি বাড়িতেই চোখ পড়লো পুরনো এক ঢেঁকি উপর।

কথা হলো সে বাড়ির মালিক রোকেয়া বেগমের সাথে।

তিনি বলেন, ঢেঁকি এখন তেমন একটা ব্যবহার করি না,মাঝে মধ্যে চাল গুঁড়া করার জন্য মাঝে মাঝে ব্যবহার করে থাকি ।

তার স্বামী সিরাজ বলেন ঢেঁকি দিয়ে তেমন একটা কাজ করা হয় না তবুও বাপ দাদার পুরনো স্মৃতি ধরে রাখছি।

প্রধানত ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল তৈরি করার কাঠের পায়ে চালিত কলকেই আমরা ঢেঁকি বলে চিনি। গ্রামাঞ্চলে ধান থেকে চাল, চালের গুঁড়া আর মশলা গুঁড়া করতেও এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক।

সাধারণত দুই তিনজন মহিলা এক সঙ্গে এই যন্ত্রে কাজ করেন। দুজন ঢেঁকির এক প্রান্তে পা দিয়ে চাপ দিতে থাকেন এবং পা সরিয়ে নিয়ে মাথার দিকটা নিচে পড়তে দেন। আর ঢেঁকির মাথার নিচে থাকা গর্তে গুঁড়ো হতে থাকে চাল, মসলা সহ প্রয়োজনীয় দব্য।

ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার কাজ খুবই পরিশ্রমের। কোন সময় একজন মহিলা সম্পূর্ণ কাজটি একাই করে থাকেন।

বাংলাদেশে রাইস মিল বা স্বয়ংক্রিয় চাল কল চালু হওয়ার পর ধান ভানার এই শিল্পটি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।