বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ইউপি নির্বাচনে, দলীয় প্রতিক বাদ : ধাপে ধাপে ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউপির নির্বাচন

1452186922

আকাশ ইকবাল : দেশে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন আগামী মার্চ থেকে কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এখন পর্যন্ত আইন যেভাবে আছে, তার কোনো পরিবর্তন না হলে দলীয় প্রতীকে কেবলমাত্র চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। অন্য পদে নির্বাচন হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। তবে পুরো নির্বাচনই নির্দলীয় ভিত্তিতে করার চিন্তাও সরকারের ভিতর সক্রিয় রয়েছে। কমিশন ইতিমধ্যে নির্বাচন আচরণবিধি ও বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে। এ মাসেই কমিশনের সভায় অনুমোদনের পর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের মতো বিধিমালা করা হবে ইউপিতেও। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে মার্চের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
সমপ্রতি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে এবং সাধারণ সদস্য ও সংরতি সদস্য পদে নির্দলীয় নির্বাচনের বিধান করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর হালনাগাদ তালিকা দিয়েই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিগত পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও আগামী ইউপি নির্বাচনে নতুন ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আলোকে নির্বাচন আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করে কমিশনে উত্থাপন করেছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা। ওই খসড়া প্রস্তুাবনা অনুযায়ী পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপিতেও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না মন্ত্রী-এমপিরা। ইসির নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দল চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জাপা-জেপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ পাবে। তবে পুরো নির্বাচন পূর্বের মতো নির্দলীয়ভাবে করা যায় কিনা-সে বিষয়ে সরকারের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন করা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে সরকার সংশ্লিষ্টদের। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের কাছে ইউপিতে নির্দলীয় নির্বাচন করার ব্যাপারে অভিমতও প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা, শপথ ও পরিষদের প্রথম সভার তারিখসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়েছিল কমিশনে। তবে নতুন করে গত ডিসেম্বরের শেষদিকে নির্বাচন আয়োজনে ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা পাঠানো হয়। সেখান থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচনের জন্য ইউপির তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে নির্বাচন করে। ওই বছরের ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় ২৪ উপজেলার প্রায় ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই দেশের বাকি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সবগুলো ইউপির নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে মার্চের মধ্যেই প্রথম ধাপের ৬০০ ইউপিতে নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে একযোগে এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীা চলবে। এরপরই মূলত হবে ইউপি নির্বাচন।’
বিধিমালার খসড়ায় যা রয়েছে: ইউপি নির্বাচন উপলে নির্বাচন আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার খসড়া প্রস্তুুত করা হয়েছে। খসড়া বিধিমালা দু’টিতে পৌরসভার মতো ইউপিতেও বেশকিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার বাইরে রাখার পাশাপাশি মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য রাখা ‘অবমাননাকর’ প্রতীক বাদ দেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের লিখিত নির্দেশে নতুন করে ১০টি প্রতীক সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের কার্যক্রম, দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়ার বিধান, প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ, নির্বাচনী ব্যয় ও উেসর বিবরণীর ক্ষেত্রে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ মাসেই কমিশন সভায় খসড়া প্রস্থাবনা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
গ্রামাঞ্চলে নির্বাচনী হাওয়া:পৌর নির্বাচনের পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে গ্রাম-গঞ্জে এক ধরনের নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুুতি শুরু করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের বিলবোর্ড-পোস্টার ছেয়ে গেছে। সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানা উন্নয়ন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দিবস উপলে জনসংযোগ, দলীয় ও স্থানীয় সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম বার্তা দিচ্ছেন ভোটারদের। পাশাপাশি দলীয় সমর্থন পেতে আগেভাগেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন তারা।