বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আমিরাতে বাংলাদেশ সমিতির কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা

: মুহাম্মদ রফিক উল্লাহ :

Rafiq

আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বৈধ সংগঠন বাংলাদেশ সমিতির কাছে প্রবাসীদের অনেক চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা রয়েছে হরহামেশা। এমনটি শুনে আসলেও কতটুকু পুরণ করতে পেরেছেন তারা! তা পাঠক মহলে ছেড়ে দিলাম। আজ আমার এই ক্ষুদ্র লেখার মাঝে যা লিখেছি তা আমার একান্ত ব্যক্তি মতামত ছাড়া আর কিছু নয়। আমি মনে করে আমার এই লেখার মাধ্যমে প্রবাসীদের সামান্য উপকার হলে নিজের লেখাটা স্বার্থক মনে করবো। আরব আমিরাতে দেশীয় মিডিয়াতে কাজ করার সুবাধে বিগত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ সমিতিকে আমার পক্ষে সামান্য জানা সম্ভব হয়েছে। কথায় আছে, বৃক্ষ তার ফলে পরিচয়। বাংলাদেশিদের এই সমিতির কথা শতকরা ৮৫ ভাগ প্রবাসীর জানা আছে কিনা সন্দেহ। বাল্যকালে আব্বার কাছে যখন স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনবর্ণ শেষ করে যুক্ত বর্ণের মিলন শিখলাম তখন পড়েছি “যত জন তত মন” ঠিক তেমনি ভাবে প্রবাসের বুকে জনে আর মনে অনেক সংগঠনের কর্যক্রম থাকলেও বাংলাদেশ সমিতি ছিল বিশেষ দিবস পালন ও নিজেদের মাঝে সীমাবদ্ধ। সমিতি নামের ফুলের সৌরভ ছড়াতে পারেনি কাননের বাহিরে।

একটি হিন্দি ছবিতে দেখেছি গোবিন্দ জেলে একটি চেয়ার নিয়ে বসে আছে তখন তাকে কাদের খান জিজ্ঞেস করেছিলো- চেয়ার নিয়ে জেলে বসে আছো কেন? প্রতিউত্তরে গোবিন্দ বলেছে -সারা দুনিয়ার মাঝে যত মারামারি খুনাখুনি হয় সব কিছুর মুলে রয়েছে চেয়ার। তাই আমি চেয়ারটা জেলে রেখে দিয়েছি। যাতে করে আর কোন মারামারি খুনাখুনি না হয়। ঠিক তেমনি ভাবে সমিতির গুরু দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তি চেয়ার হারানোর ভয় কিংবা অন্য কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে বাংলাদেশ সমিতির সদস্য পদ লাভ করা মানে সোনার হরিণ মিলার মতো মনে করেন। তিনি ছিলেন একটু তোশামোদ প্রিয়। তাকে হরি প্রসাদ শাস্ত্রের তৈল যত মারা যায় তত খুশি হন সাময়িক। আমি দেখেছি, তাকে তৈল মেরে অনেকে সমিতির গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব ভাগিয়ে নিয়েছিল। পরে তাকে তৈল একটু কম মারাতে তাদেরকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। যত দিন তৈল ছিলো, তত দিন পদও ছিলো।

আমি আগেও বলেছি আমিরাতের ৮৫% প্রবাসী বাংলাদেশ সমিতি চেনা কিনা সন্দেহ, তার মূল কয়েকটা কারণও রয়েছে বলে আমার মনে হয়। আগে একটি নাম মাত্র অফিস থাকলেও তা আবাসিক হিসেবে ২ জন ভাড়া থাকতো। শুনেছি, কর্তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় ভাড়াও নিয়মিত দিতে হতো না। অনেকে একবার সমিতির সদস্য পদ পেয়ে আর নবায়ন করা প্রয়োজনবোধ মনে করেননি । ঘর পোড়া গরু সিন্দুর দেখলে ভয় পাওয়ার মতো সমিতির কথা বললে মুখ ফিরিয়ে নেন অনেকে। তাদের দাবী সমিতির সদস্য নবায়নের টাকা দিয়ে অন্য কিছু করা অনেক ভালো। সমিতিতে কোন কিছু দেয়ার মানে হচ্ছে স্বহস্তে কোন জীব ধরে বাঘের মুখে তুলে দেবার মতো। আবার সদস্য হতে গেলে তাকে পোহাতে হতো অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। একদিকে মারতে হতো তৈল অন্য দিকে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানার দেখাতে হতো। ইচ্ছা করলে বাংলাদেশ সমিতির মাধ্যমে অনেক কিছু করতে পারে প্রবাসীদের জন্য কিন্তু কোন কারণে প্রবাসীদের কাছে এটা একটা পকেট সমিতি নামে পরিচয় লাভ করেছে তা আমার বোধগম্য নয়!

সাত সমুদ্র তের নদী পার করে জীবন যুদ্ধে জীবিকার তাগিদে যারা প্রবাসে আসেন তারা খুবই অসহায়ের মতো জীবন যাপন করে। ৩২ টা দাঁতের মাঝে একটা জিহ্বার কখন কামড় খাওয়ার ভয় না থাকলেও প্রবাসীদের মনে একটা ভয় কাজ করে সদা। কখন না জানি কি হয়? একবার দূতাবাসে গেলে পরে এতিমের মতো ফিরে এসে শেষ আশ্রস্থল বলে সমিতির কাছে আসলে কারো দেখা মিলতো না। বিচারের বাণী নিভৃতে নীরবে কাঁন্দে।

এত কিছুর মাঝে তমানিশার আঁধার ভেদ করে হঠাৎ আলোর দেখা মিললো অনেক জল্পনা-কল্পনার পর গত ৩০ এপ্রিল সমিতির দ্বি-বার্ষিকী নির্বাচনের মাধমে। প্রায় দেড় যুগ পকেট সমিতি থেকে মুক্ত হলো বাংলাদেশ সমিতি। নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন অনেক গুণিজনের। আশা করি, আগামীতে প্রবাসীদের মনের দুঃখ-কষ্ট বুঝে কাজ করে যাবে বাংলাদেশ সমিতি। মুছে যাবে যত সব গ্লানী আর বেদনা। বেরিয়ে আসবে আগের সকল প্রকার বন্দি দশা থেকে। হাত বাড়ানোর আগে সমিতি পৌঁছে যাবে প্রবাসীর হাতের নাগালে। এই বাংলাদেশ সমিতি নামের তরীটি এগিয়ে থেকে এগিয়ে দিবে প্রবাসীদের। এই প্রত্যাশায়……।

লেখক : মুহাম্মদ রফিক উল্লাহ
যমুনা টেলিভিশন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধি।
[email protected]