বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা প্রতিবাদ মানববন্ধন

4_57754

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট ও নির্যাতনের প্রতিবাদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে নেতারা এসব হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের অবলিম্বে গ্রেফতার এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের ওপর হামলা করা মানবাধিকার লংঘনের শামিল। সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৭ দফা দাবির প্রধান দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এটিকে। বলা হয়েছে, মামলা দায়েরের পর প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার এবং ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। ৭ দফায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও উপাসনালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনঃর্নিমাণ করে দেয়া এবং সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, কাজল দেবনাথ, নির্মল রোজারিও প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৫ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের প্রায় ৩২টি জেলায় সংখ্যালঘুদের ৪৮৫টি বাড়িঘর, ৫৭৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ১৫২টি মন্দির-উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও হামলা হয়েছে। নির্বাচনোত্তর ৪ দিনে সারা দেশে আড়াই হাজার সংখ্যালঘু পরিবারকে নির্যাতন করা হয়েছে। দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে অসংখ্য পরিবার এরই মধ্যে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ ছাড়া বিকল্প নেই বলে ভাবছেন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর যে প্রচণ্ড আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে তা নিরসনে সরকারসহ সব রাজনৈতিক দল এবং সর্বস্তরের জনতাকে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব সংগঠন, প্রচার মাধ্যম বা ব্যক্তি এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন নেতারা তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে এ সংকট মোকাবেলা করবে এবং বিজয়ী হবে।
বৃহস্পতিবার সাংবিধানিক অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব সুরঞ্জন ঘোষ এক বিবৃতিতে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাংচুর, জানমালের ক্ষতিসাধন ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি একইসঙ্গে এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহসচিব ড. সাউল ইসলাম দিলদারসহ নেতারা। তারা হামলার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। হামলার প্রতিবাদে কমিশন সব বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বলে সংগঠনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিএফইউজে এবং ডিইউজের একাংশ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, সংখ্যালঘুরা এদেশেরই নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার হরণ করা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডিইউজের একাংশের সাদারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিআরইর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আরও মিছিল-সমাবেশ ও মানবন্ধন করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, ছাত্রলীগ, লেখক- শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-শিক্ষক, ছাত্র-শ্রমজীবী-পেশাজীবী-রাজনৈতিক কর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের মানববন্ধন : দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ। মানববন্ধনে সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কঠোর হাতে দমন, উপদ্রুতদের মাঝে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরির সামগ্রী এবং শিশু খাদ্যসহ ত্রাণের ব্যাবস্থা, হামলাকারী ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনাসহ সরকারের কাছে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় রায়ের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান বাবলু, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি হাসানুজ্জামান, শ্রমিককর্মী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি আবদুল ওয়াহেদসহ মঞ্চের অন্তর্ভুক্ত ২৮টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি : সারা দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ সময় তারা হামলাকারীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও দাবি জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষকরা এ দাবি জানান। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান, ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. এজে শফিউল আলম ভুঁইয়া প্রমুখ। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ ব্রিগেড : ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে কয়েক দিন ধরে যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ব্রিগেড। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক লাঠি সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক এএন রাশেদা, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাইয়িদ খান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমন প্রমুখ।
গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট : সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসংস্কৃতি ফ্রন্টের সভাপতি হায়দার আনোয়ার খান জুনোর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠক মহসিন শস্ত্রপাণি, ফ্রন্টের সহ-সভাপতি এএসএম কামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আকমল হোসেন, ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লালটু প্রমুখ।
ঢাবিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : শেরপুর, জামালপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হামলাকারীদের শাস্তি দাবি জানিয়েছে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগছাস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগছাস) ঢাকা মহানগর সভাপতি সবুজ নকরেটের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি জুয়েল চাকমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত ত্রিপুরা, জুয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রাখী ম্রং প্রমুখ।

 

 

উৎস- যুগান্তর

Leave a Reply