শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

নিজামী-বাবরসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

9365_f1

বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ত্র চোরাচালান মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে। একই ঘটনায় অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মামলা দায়েরের ৯ বছর পর বিচারক এ রায় ঘোষণা করলেন। রায় ঘোষণার পরপরই আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আসামি পক্ষের
আইনজীবীরা। তারা এ রায় প্রত্যাখ্যান করে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়েরের ঘোষণা দিয়েছেন। চোরাচালানের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেয়াকেও নজিরবিহীন হিসেবে অভিহিত করেছেন তারা। অন্যদিকে, সরকার পক্ষ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, এ রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের যে কোন রায় ডেথরেফারেন্স নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে আসে। গতকালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন শাখার এম এনামুল হক, চোরাচালানি হাফিজুর রহমান, অস্ত্র সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ, হাজী আবদুস সোবাহান ও সাবেক শিল্প সচিব নুরুল আমিন। বিচারক এসএম মুজিবুর রহমান রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আদালত সবকিছু যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে। তাই মৃত্যুদণ্ডই উত্তম শাস্তি বলে মনে করছে।’ অস্ত্র আটকের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটাই প্রমাণিত হয়েছে উলফার সঙ্গে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আর সুসম্পর্ক ছিল তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনেরও। এনএসআই ও ডিজিএফআই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুই গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা উলফার সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন।’ উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া প্রসঙ্গে বিচারক বলেন, ‘মেজর লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে পরেশ বড়ুয়ার যোগাযোগের বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে আদালত। রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ বাবর ও নিজামীর প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘তারা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে সক্রিয় ছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাদের অপরাধকেও ছোট করে দেখছে না আদালত। তারাও সমান অপরাধী। তাই তারাও এই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বলে আদালত মনে করছে।’
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে আনা হয় এই মামলার আসামিদের। এই সময় আদালতে ভিড় লেগে যায়। দুই মামলায় অভিযুক্ত ১১ আসামিকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামাতেই শুরু হয় হই-হল্লোড়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে মামলার দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি শুরু হয় পুলিশের। বাবর এই সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সরকারের কথায় আমাদের ওপর অন্যায় করেছেন। মানুষ বলে মনে করেননি। তবে মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায় না। সময় এলে জাতি ঠিকই সমুচিত জবাব দেবে।’ মতিউর রহমান নিজামী পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নাটক তো কম হলো না। আর কত?’ পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার বেশ কিছুক্ষণ পর কাঠগড়ায় না উঠে তারা দু’জন এজলাস কক্ষের চেয়ারে বসে পড়েন। পরে অনুরোধে কাঠগড়ায় গিয়ে উপস্থিত হন। রায়কে ঘিরে বুধবার রাত থেকেই আদালত চত্বরে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। কেবল আদালত চত্বরের আশেপাশেই ছিল কয়েক শ’ পুলিশ। রায়কে কেন্দ্র করে নগরীতে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্যকে জড়ো করা হয়েছিল। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘রায়কে ঘিরে আদালত ভবনের আশপাশের উঁচু ভবন ও ফুটওভারের ওপর আর্মড পুলিশ  মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের গতিবিধির ওপরও নজর রাখা হয়।’ ২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল গভীর রাতে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড সিইউএফএল  জেটিঘাটে ধরা পড়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র। এরপর পরের বছর ৬ই জুলাই এই মামলায় বাদী আহাদুর রহমানের সাক্ষ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। ২০০৭ সালের ২০শে নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন করে। ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি এএসপি মনিরুজ্জামান তদন্ত শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১০ই অক্টোবর অস্ত্র মামলায়  মোট ৫৬ জন ও চোরাচালান মামলায় মোট ৫৩ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। আটক ১০ ট্রাক অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল উজিগান, টমিগান, এসএমজি, এমএমজিসহ ১৭৯০টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি গুলি, ৬ হাজার ৩৯২টি গুলির ম্যাগাজিন, ২৪ হাজার ৯৯৬টি গ্রেনেড এবং ১৫০টি রকেট লাঞ্চার।
পর্যবেক্ষণে বিচারক: ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের কথা শুনে নীরব ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদ জিয়া। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী তাকে অস্ত্র আটকের কথা জানিয়েছিলেন। রায় ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান তার পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে এ মামলায় হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিমকে টাকা দিতে উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিনের মাধ্যমে টাকা দেন এআরওয়াই গ্রুপ। এ গ্রুপের আবদুর রাজ্জাক ইউসুফের সঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগাযোগ ছিল বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এ মামলা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় তাদের জবানবন্দিতে ও যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা একে অন্যকে জড়িয়ে  যেসব কথা বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে তাদের সঙ্গে উলফার  যোগাযোগ ছিল। তারা এটা স্বীকারও করেছেন। এনএসআইয়ের মহাপরিচালক তাদের সহায়তায় সস্ত্রিক দুবাই বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন। মেজর লিয়াতক স্বীকার করেন, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তিনি এ নিয়ে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। অস্ত্র আটকের সময় মেজর লিয়াকত নিজেকে আবুল হোসেন পরিচয় দিয়ে বাধা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন।
বিচারক আরও বলেন, ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী সাক্ষ্য দেয়ার সময় জানিয়েছিলেন, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এ ঘটনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ কথায় তখন নীরব ছিলেন। এ ঘটনাও মামলায় এসেছে।
বিমর্ষ স্বজনরা: রায় শোনার পরে আসামিদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।  আদালত প্রাঙ্গণে তাদের দেখা যায় বিমর্ষ অবস্থায়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খানের স্ত্রী সেলিমা সুলতানা তিনতলার এজলাসকক্ষ থেকে স্বামীর পাশাপাশি  হেঁটে হেঁটে নিচে নেমে আসেন। পুলিশ, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যেও তিনি স্বামীর পাশাপাশি থাকতে চেয়েছেন সব সময়।  চোখ ছলছল করছিল সেলিমার। আকবর হোসেন প্রিজন ভ্যানে উঠে যাওয়ার পর গ্রিলের দিকে এলে সেলিমা আদালত ভবনের ফটকের পাশে একটি উঁচু দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে প্রিজন ভ্যান চালু হলে আকবর হোসেন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে দেন। সেলিমা বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে সেটি ধরেন। এভাবে একসময় চলে যায় প্রিজন ভ্যানটি। স্বামীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিলেন সেলিমা। তার চোখ দিয়ে টপ টপ পানি ঝরছিল। এরপর এক স্বজনসহ তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমার স্বামী এই ঘটনায় জড়িত নয়। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি দীন মোহাম্মদ অস্ত্র খালাসের জন্য ট্রলার ও শ্রমিক সরবরাহকারী ছিলেন। রায় শোনার পর  থেকে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন দীন মোহাম্মদের স্ত্রী মিনু আরা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি স্বামীর পেছন পেছন নিচে নেমে আসেন। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আল্লাহ, এটা কি হলো।’ আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় তাকে সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি কঁাঁদছিলেন বলে কোন কথায় বলতে পারছিলেন না। একটু শান্ত হয়ে মিনু আরা বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। তাকে শুধু শুধু এই মামলায় ফাঁসি  দেয়া হয়েছে। আমার স্বামী নির্দোষ। আমরা গরিব মানুষ। আমার পরিবারের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিচার দিলাম। আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুস সোবাহানের বড় ছেলে ওসমানও রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। রায়ে তিনি হতাশ হয়েছেন। ওসমান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার বাবা নির্দোষ। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে যাবো। একইভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমানের ভাই ওয়াসিউর রহমান ফাঁসির রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়ে। রায় ঘোষণার পর সাহাবকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন স্ত্রী-মেয়ে। গণমাধ্যমে তারা কোন মন্তব্য করেননি।
১২ আসামি ফাঁসির সেলে: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১২ আসামিকে ফাঁসির সেলে (কনডেম  সেল) রাখা হয়েছে। দুপুরে রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিজামী, বাবরসহ ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের ডিভিশন বাতিল করে ফাঁসির সেলে রাখা হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া বলেন, কারাগারে আসা ১২ আসামির মধ্যে নিজামী, বাবরসহ নয়জন আসামি ডিভিশনপ্রাপ্ত। তাদের সাজা হওয়ায় ডিভিশন বাতিল হয়ে যায়। তাই আসামিদের ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ২ আসামীর মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নূরুল আমিন পলাতক রয়েছেন।
দেশ প্রেমিক নেতৃত্বকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে এই রায়: জামায়াত
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে দশ ট্রাক চোরাচালানির মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ বলেছেন, সরকার তার অঙ্কিত ছকে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের যে ষড়যন্ত্র করছে, আজকের রায়ের মাধ্যমে তার আর এক ধাপ পূরণ হলো মাত্র। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার তার পরিকল্পনা  মোতাবেক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হত্যা করে দেশকে  নেতৃত্বশূন্য করার যে ষড়যন্ত্র করছে, এ রায় তার একটি অংশ মাত্র। মামলার এফআইআর-এ মতিউর রহমান নিজামীর নাম ছিল না। ২০০৪ সালের ১১ই জুন প্রথম চার্জশিটেও তার নাম ছিল না। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১১ সালের ২৬শে জুন দুটি মামলায় অধিকতর তদন্ত শেষে মতিউর রহমান নিজামীকে অভিযুক্ত করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য চার্জশিট জমা দেয়া হয়। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক, কথিত চোরাচালান ও অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এ রায়ে আমরা ব্যথিত, স্তম্ভিত এবং বিস্মিত। তিনি আরও বলেন, নিজামীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আইনগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলা করা হবে।
রাজশাহীতে জামায়াতের বিক্ষোভ ককটেল বিস্ফোরণ
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর জামায়াত। গতকাল দুপুর ২টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা এলাকা থেকে এ মিছিল বের হয়। এদিকে মিছিল শেষে ওই এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণে দুুই ফটোসাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- দৈনিক প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক শহিদুল ইসলাম দুখু ও দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক কাবিল হোসেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত এক পথচারীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাদের প্রত্যেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিজামীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর দুপুর দুইটার দিকে সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হঠাৎ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের নেতৃত্বে মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এদিকে, মিছিল শেষে চলে যাবার সময় ওই এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ওই দুই ফটোসাংবাদিক আহত হন। এছাড়া, একজন সাধারণ পথচারীও আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই সড়কে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যান চলাচল। মৌলভীবাজার জামায়াতেরপ্রতিবাদ মিছিলমৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে মৌলভীবাজার পৌরসভা জামায়াতের উদ্যোগে শহরের পশ্চিমবাজারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি  এম সাইফুর রহমান রোড হয়ে কুসুমবাগ পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর জামায়াত আমীর ইয়ামির আলী, সদর উপজেলা জামায়াত আমীর আলাউদ্দীন শাহ, পৌর সেক্রেটারি আহমদ ফারুক, সদর উপজেলা সেক্রেটারি  সৈয়দ তারেকুল হামিদ, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি হাফেজ তাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।  মদনে ৪৮ ঘণ্টা, মোহনগঞ্জে২৪ ঘণ্টা হরতাল নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে নেত্রকোনার তিন উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে রায়ের প্রতিবাদে মদন উপজেলায় আজ সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা এবং মোহনগঞ্জ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে উপজেলা বিএনপি। আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হারেছের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হারেছের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এন আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন, উপজেলা যুবদল সভাপতি সাইফ আহমেদ সেকুল, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি আমানউল্লা সায়েম প্রমুখ। সমাবেশ থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মৃত্যুদণ্ডের আদেশের প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে উপজেলায় ৪৮ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করা হয়। একই সময়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আ.ক.ম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তৃতা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন তালুকদার, সাবেক সম্পাদক নুরুল আমিন, জেলা বিএনপি নেতা ফজলুল হক মাসুম, উপজেলা যুবদল সম্পাদক গোলাম রব্বানী পুতুল, উপজেলা ছাত্রদল সম্পাদক মইনুল হোসেন কানন প্রমুখ। সমাবেশ থেকে রায়ের প্রতিবাদে মোহনগঞ্জে শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়। অপরদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়ের প্রতিবাদে খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হালিমের নেতৃত্বে মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোকন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, গিয়াস উদ্দিন, আবদুর রউফ স্বাধীন, মাহাবুবুর রহমান কেষ্ট প্রমুখ।

উৎস- মানবজমিন

Leave a Reply