বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু

9358_b1

 

আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা বুধবার থেকেই তুরাগ তীরে ইজতেমা মাঠে আসছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা ও প্রস্তুতি আগের পর্বের মতোই রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। ইতিমধ্যে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমা মাঠে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তারা জেলাওয়ারি মাঠের ৩৮টি খিত্তায় অবস্থান করছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গতকালই বিকালে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে ইতিমধ্যে জামাতবদ্ধ কয়েক লাখ মুসল্লি মাঠে নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা মাঠে আসছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। তবে  এ পর্বের ৩৩ জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরা ইজতেমা মাঠকে ৩৮ খিত্তায় (অংশে) ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা বুধবার থেকেই ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেন। ইতিপূর্বে ১ম পর্বের পুরো ইজতেমা মাঠকে ৪০ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছিল, যাতে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে এবার ঢাকাসহ ৩৩ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় যোগ দেবেন। ঢাকা জেলার মুসল্লি বেশি থাকায় এ পর্বে তারা ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন মানবজমিনকে জানান। ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার আবদুল কুদ্দুস জানান, দ্বিতীয় পর্বে কোন জেলার মুসল্লি কোন খিত্তায় থাকবেন তা-ও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১-২ নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা জেলা, ৩ নং ও ৪ নং খিত্তায় ঢাকা-২, কক্সবাজার, ৫ নং মানিকগঞ্জ, ৬ নং খিত্তায় জামালপুর, ১০ নং পিরোজপুর, ৭ নং খিত্তায় পটুয়াখালী, ৮ নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৯ নং খিত্তায় নেত্রকোনা, ১২ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৩ নং খিত্তায় মেহেরপুর, ১৪ নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ১৫ নং খিত্তায় ময়মনসিংহ ১, ১৬ নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-২, ১৭ নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-৩, ১৮ নং খিত্তায় লক্ষ্মীপুর, ১৯ নং খিত্তায় বি.বাড়িয়া, ২০ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ২১ নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ৩০ নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, ১৭ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৮ নং খিত্তায় মাগুরা, ১৯ নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ২০ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ২১ নং খিত্তায় নোয়াখালী, ২২ নং খিত্তায় নীলফামারী, ২৩ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও ২৪ নং খিত্তায় পঞ্চগড়, ২৫ নং খিত্তায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ, ২৬ নং খিত্তায় বগুড়া, ২৭ নং খিত্তায় পাবনা, ২৮ নং খিত্তায় নওগাঁ, ২৯ নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ-১, ৩০ নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ-২, ৩১ মুন্সীগঞ্জ-মাদারীপুর, ৩২ নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ৩৩ নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৩৪ নং খিত্তায় মাগুরা, ৩৫ নং খিত্তায় খুলনা, ৩৬ নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৩৭ ও ৩৮ নং খিত্তায় মৌলভীবাজার জেলার মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। ময়দান এলাকায় বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানো হয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা ওইসব টাওয়ার থেকে ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করছেন। আকাশে হেলিকপ্টারে ও তুরাগ নদীতে স্পিড বোটে নৌ-টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, মুসল্লিবেশে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে ও খিত্তার মুসল্লিদের মাঝে অবস্থান করছেন। মাঠের প্রবেশপথে ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা কড়া নজরদারি করছেন। প্রতিটি গেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা বসানো হয়েছে। মাঠের উত্তর পাশে স্থাপিত র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। র‌্যাব ছাড়াও পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ইজতেমা এলাকায় পৃথক কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে প্রবেশকালেও মুসল্লিদের (সন্দেহভাজনদের) মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। প্রথম পর্বের এ দিনে (বৃহস্পতিবার) মানুষের যে চাপ ছিল দ্বিতীয় পর্বের মুসল্লিদেরও তেমন চাপ লক্ষণীয়। প্রতিটি খিত্তা আগের মতো পরিপূর্ণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই মুসল্লিরা মাঠে চলে আসবেন বলে ইজতেমা কর্তৃপক্ষের ধারণা। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জাহিদ আহসান রাসেল জানান, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা প্রত্যেকটি মুসল্লির সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাদি সরকার অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুভাবে সম্পন্ন এবং সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তা আগের মতোই বহাল থাকবে বলে জানান। মাঠের ভিতর-বাইরে সাদা পোশাক এবং পোশাকে পুলিশ, র‌্যাব, সার্বক্ষণিক নজরদারি টহল রয়েছে। স্থল, নৌ-আকাশ পথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল হোসেন প্রমুখ। জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি আগের মতোই রয়েছে। ছিনতাই, সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধের জন্য ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ্‌ আলম শরীফ জানান, বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পূর্বের মতোই থাকছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ১-এর নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ইজতেমায় প্রথম ধাপে যে ব্যবস্থাদি নেয়া হয়েছিল তা আগের মতোই বাস্তবায়ন করা হবে।

 

উৎস- মানবজমিন

Leave a Reply