শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দখল-দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলী

বিশ্বজিৎ পাল :

jafor

বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, ইতিহাস, ঐতিহ্য নদীকেন্দ্রিক। একইসঙ্গে শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম, গ্রাম, নগর, বন্দর, মানববসতি, ভূ-ভাগ ধারাসৃষ্টি, আবর্তন, উন্নয়ন নদীতীরবর্তী। ব-দ্বীপ আকৃতির এ ভূখ-ে ছোটবড় ২৩০টি নদ-নদী প্রবহমান। কোনো এক সময়ে যাত্রীবাহী নৌকা ভ্রমণ, পরিবহন তৎপরতায় জলমহলের রূপ ছিল এই বাংলায়। নৌপথ ছিল ২৫ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। খাল, বিল, নদীনালা পরিবহনযোগ্য জলাভূমি ছিল ৪ হাজার। প্রবহমান নদীপথের দাপট বাংলাকে গৌরবান্বিত করেছিল। সওদাগরি নৌকা আর ভাসমান ভেলার খেলা চলেÑ এমন নদীপথ বর্তমানে ভরা বর্ষা মৌসুমে ৫ হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। গ্রীষ্ম মৌসুমে অনিবার্যভাবে তা ২ হাজর কিলোমিটারের বেশি নয়। অর্থসাশ্রয়ী বিকল্প পথ যতই সৃষ্টি প্রক্রিয়া সমুন্নত করা হয়েছে, নদীপথের গ্রহণযোগ্যতা ততো বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপদ বাহন হিসেবে নদীপথের সুবিধা ব্যবস্থা আজ প্রশ্নাতীত হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রামের প্রাণপ্রবহ বলে খ্যাত লুসাই কন্যা কর্ণফুলী নদী অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এ নদীর তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখায় এর নাব্য হ্রাস পাচ্ছে এবং নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে জেগে ওঠা চর এবং তীর দখল করে অবৈধভাবে গড় উঠেছে প্রায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এতে নদীর নাব্য কমে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে পারে চট্টগ্রাম বন্দরÑ এমনটি সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। সরকারি জায়গা দখল করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একের পর এক অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসছে। আদালতের নির্দেশ ও প্রশাসনের একাধিকবার উদ্যোগের পরও প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

নদীর দুই পাড়ে বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই স্থাপিত শিল্প কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত বর্জ্য নিঃসরণ ও নগরবাসীর নিঃসরিত ময়লা-আবর্জনায় দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দূষণের ভয়াবহতায় নদীর হ্রাস এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের প্রাণপ্রবহ বলে খ্যাত কর্ণফুলী নদীর নাব্য আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে ভূমি দস্যুদের কালো থাবায় ছোট হয়ে আসছে লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর আয়তন। অব্যাহত দখল আর দূষণের কারণে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। মানুষ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এ নদীকে দূষণমুক্ত করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। আর মিল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধনপূর্বক নদীতে ফেলা এখন সময়ের দাবি। মূল কথা, নদী দখলের অপচেষ্টার হীন স্বার্থ চরিতার্থ রোধ সামাজিকভাবে না করা পর্যন্ত এ নদীর অপমৃত্যু বন্ধ করা যাবে না।

কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply